এম এম লিংকন: [৩] নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান এমন দাবি করে আমাদের সময় ডটকমকে বলছেন, ভোটাররা যাতে তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারে, সে জন্য কমিশন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অনিয়মে কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। 

[৪] এই বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথও সাংবাদিকেদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, মাঠ পর্যায়ে তথ্যের ভিত্তিÍতে প্রশাসন ও পুলিশে রদবদল হয়েছে। গত সপ্তাহে কমিশনের চারজন কমিশনার সারাদেশের নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে গত ৩০ নভেম্বর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে ২৯ দল। আর মোট ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছে ৭৪৭ জন।   

[৫] শনিবার দুইজন জেলা প্রশাসকসহ (ডিসি) এরআগে সারাদেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) হঠাৎ রদবদলের নির্দেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনিছুর রহমান বলেন, গত সপ্তাহে আমিসহ চারজন কমিশনার সারাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছি। একই এলাকাই দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে কোন ইউএনও ও থানার ওসি কোনো প্রার্থী বা বিশেষ কোন মহলের পক্ষপাতিত্ব করতেও পারে। এতে করে ভোটের মাঠে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে ব্যাঘাতও ঘটতে পারে। এসব কিছু বিবেচনাসহ সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এছাড়া সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণের পাশাপাশি দেশবাসিসহ পুরো বিশ্বের কাছে বিশ্বাসযোগ্য একটা নির্বাচন করতে মনোযোগ ইসির। 

[৬] এদিকে দুই জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে ময়মনসিংহের ডিসি মোস্তাফিজুর রহমানকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে উপসচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের ডিসি দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীকে ময়মনসিংহের নতুন ডিসি করা হয়েছে। আর জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে সংযুক্ত উপসচিব মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরীকে সুনামগঞ্জের ডিসি করা হয়েছে। এরআগে, বৃহস্পতিবার জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে দেশের সব ইউএনও ও ওসিকে পর্যায়ক্রমে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। 

[৭] এর আগে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেছিলেন, মাঠ প্রশাসনে বড় রদবদল করতে গেলে বিশৃঙ্খলা হবে। এর দায় কে নেবে। আর রদবদল করতে গেলে অনেক টাকা প্রয়োজন। তাই সুনিদিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে বদলি কথা এখনও ভাবছে না কমিশন। এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসির অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিকদের বলেন, রদবদলের ফলে বিশৃঙ্খলার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী উপজেলা বা জেলায় যেখানে দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেখানে দায়িত্ব পালন করবেন।

[৮] ওসি ও ইউএনওদের রদবদল সরকার চেয়েছে, না কি আপনারা চেয়েছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নির্বাচন কমিশন চেয়েছে। তাদের যে ফাইন্ডিংস, তার ভিত্তিতে এটা হয়েছে। 

[৯] স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দানকারী স্বতন্ত্রসহ সব প্রার্থীর নিরাপত্তার নিশ্চত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

[১০] নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছে ৩০৪ জন, জাতীয় পার্টি ৩০৪ জন, তৃণমূল বিএনপি ১৫১ জন, জাসদ ৯১ জন, ইসলামী ঐক্যজোট ৪৫ জন, জাকের পার্টি ২১৮ জন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯ জন, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৩ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩৪ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭ জন, গণফ্রন্ট ২৫ জন, গণফোরাম ৯ জন, জমিয়তে ইসলাম বাংলাদেশ ১ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১৪২ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ২ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১৩ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৪৭ জন, জাতীয় পার্টি (জেপি) ২০ জন, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ৬ জন, গণতন্ত্রী পার্টি ১২ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ৬ জন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ১৪ জন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল ১ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১৩ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৮ জন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ১ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) ৫ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ৭৪ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ৫৫ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেস ১১৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ৪৯ জন ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ৮২ জন। 

[১১] ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি। সম্পাদনা: তারিক আল বান্না